এম কে আলম চৌধুরী
বান্দরবানে বিজু ও বিষু উৎসবের মাধ্যমে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টিদের বৈসাবির আয়োজন শুরু
পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টিদের সবচেয়ে বড় সামাজিক উৎসব বৈসাবি শুরু হয়েছে। সকালে বান্দরবানের সাংগু নদীতে ফুল উৎসর্গের মাধ্যমে বান্দরবানে চাকমা সম্প্রদায়ের বিজু ও তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের বিষু উৎসব শুরু হয়। পুরাতন বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে বরণ করে নিতে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে সপ্তাহব্যাপী নানা আয়োজনে চলবে এই আয়োজন।
শনিবার (১২ এপ্রিল) ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে বান্দরবানে বসবাসরত তঞ্চঙ্গ্যা ও চাকমা সম্প্রদায়ে শিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী নর-নারী উপস্থিত হয় সাংগু নদীর তীরে।
এসময় সাংগু নদীর পানিকে লক্ষ্য করে মোমবাতি,ধুপ জ্বালানোর পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টির চাকমা ও তংচঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের তরুণ তরুনীরা ফুল উৎসর্গ করে ফুল বিজু ও বিষু উৎসবের শুরু করে। এসময় বিভিন্ন পাড়া ও গ্রামের তংচঙ্গ্যা ও চাকমা সম্প্রদায়ের যুবক-যুবতীরা একত্রিত হয়ে গঙ্গা মাকে প্রণাম জানায় এবং অতীতের সকল দু:খ, কষ্ট ও গ্লানি মুছে আগামীর নতুন সুন্দর দিনের প্রত্যাশা কামনা করেন।
চাকমা সম্প্রদায়ের বিজু ও তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের বিষু উৎসব চাকমা সম্প্রদায়ের বিজু ও তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের বিষু উৎসবে নববর্ষের এই আনন্দে একসাথে সকলে মিলিত হতে পেরে খুশি তরুণ-তরুনী থেকে শিশু ও বয়বৃদ্ধরা।
বাংলা বর্ষপঞ্জিকা অনুসারে বছরের শেষ দুদিন ও বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন চাকমারা ফুল বিজু, মূল বিজু ও গজ্জ্যাপজ্জ্যা এই তিন দিন বিজু পালন করে থাকে। আগামীকাল মুল অনুষ্টান চাকমাদের ঘরে ঘরে হরেক রকমের মিশ্রনে পাজন রান্না করে পরিবেশন করা হবে, নতুন কাপড় পরিধান করে দলবেঁধে পুরো গ্রাম ঘুরে বেড়াবে তরুন তরুণীরা।
তাছাড়া সাধ্য অনুসারে ঘরে ঘরে বিভিন্ন রকমের পিঠা তৈরী করে বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী,আত্মীয়-স্বজন এমনকি কারোর সাথে অতীতে বৈরিতা বা ঝগড়া, মনোমালিন্য থাকলেও এদিন সবাই ভুলে গিয়ে একে অপরকে ক্ষমা করে দিয়ে নিজের বাড়ীতে নিমন্ত্রণ করে পিঠাসহ হরেকরকম খাবার পরিবেশন করে।
তিন পার্বত্য জেলা বিশেষ করে বান্দরবান পার্বত্য জেলায় বাঙালী ছাড়াও ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টির বসবাস রয়েছে যা দেশের অন্য কোন জেলায় নেই। ১১জাতি স্বত্তার নানা বৈচিত্রময় জীবনধারা,নানা সংস্কৃতির সম্মিলন উৎসবে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে বলে জানান আয়োজকেরা।
বাংলাদেশ তংচঙ্গ্যা কল্যাণ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক উজ্বল তংচঙ্গ্যা জানান, প্রতি বছরেরমত এবারেও আমরা বর্ণাঢ্য আয়োজনে সাংগু নদীতে ফুল উৎসর্গ করে আমাদের এবারের বৈসাবির আয়োজন শুরু করেছি আর এতে চাকমা,তংচঙ্গ্যাদের পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মালম্বী যোগ দিচ্ছে। তিনি আরো জানান, ফুল বিজু ও বিঝুর মাধ্যমে বান্দরবানে বৈসাবির আয়োজন শুরু হয়েছে, আর সপ্তাহব্যাপী নানা ধর্মীয়, মাঙ্গলিক ও সামাজিক কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে চলবে বৈসাবির এই আয়োজন।