নিজস্ব প্রতিবেদক:
জমি দখলের কৌশলী খেলায় মুসলেহ উদ্দিন গং:,
রামুর রাহেলা আক্তার ও পরিবার বারবার হয়রানির শিকার
কক্সবাজারের রামু উপজেলার ধলিরছড়া ইউনিয়নের একাধিক দাগে ২.৩২ একর আয়তনের একটি সম্পত্তিকে কেন্দ্র করে চরম হয়রানি ও জালিয়াতির শিকার হচ্ছেন রাহেলা আক্তার ও তার পরিবার। দীর্ঘদিন ধরে বৈধ মালিক হিসেবে জমিটি ভোগদখলে থাকলেও মুসলেহ উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি ও তার সহযোগীরা প্রভাব খাটিয়ে এবং আদালতের প্রক্রিয়াকে বারবার ব্যবহার করে জমির দখল নেওয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে তারা রোপিত ধান কেটে নেওয়ার মতো দুঃসাহসিক কাজও করেছেন।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার ধলিরছড়া মৌজার এস.এ খতিয়ানভুক্ত ২.৩২ একর জমি বিভিন্ন সময়ে হস্তান্তর ও উত্তরাধিকারের মাধ্যমে মফিজুর রহমানের ওয়ারিশগণের নামে বৈধভাবে প্রাপ্ত হয়। রাহেলা আক্তারসহ অন্যান্য ওয়ারিশগণ বহু বছর ধরে এই জমি দখলে রেখে ফসল ফলিয়ে আসছিলেন। কিন্তু ২০০৭ সালে মোজাম্মেল হক গং হঠাৎ একটি ভুয়া মামলা (নং ১৫৯/২০০৭) দায়ের করেন, যেখানে প্রকৃত মালিকদের নাম ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দেওয়া হয়। মামলায় বিবাদী করা হয় মোহাম্মদ ইসলাম গংকে, যারা আদৌ এই জমির সাথে সম্পৃক্ত নন।
২০০৯ সালে আদালতে এক অস্বাভাবিক সোলেহনামার মাধ্যমে এই ভুয়া মামলায় রায়-ডিক্রি নেওয়া হয়, যা পরবর্তীতে জমি দখলের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করেন মোজাম্মেল হকের ভাই মুসলেহ উদ্দিন। এই মুসলেহ উদ্দিনই পরবর্তীতে আদালতে নানা কৌশলে বারবার মিথ্যা আবেদন দাখিল করে রাহেলা আক্তার গংদের হয়রানি করতে থাকেন।
রাহেলা আক্তার ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে ২০১০ সালে রামু সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে (মামলা নং ৩৩/১০) একটি দখল স্থিতি সংক্রান্ত মামলা দায়ের করা হয়। এতে আদালত ২০২৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রদান করে মুসলেহ উদ্দিন গংদের জমিতে অনুপ্রবেশ, ফসল কাটা ও রূপ পরিবর্তনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। কিন্তু মামলার রায় আসার আগেই মুসলেহ উদ্দিন গং ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে “মিস আপিল মামলা নং ৬৮/২৪” দায়ের করে সেই নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করিয়ে নেন।
এই সুযোগে তারা ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে জোরপূর্বক রাহেলা আক্তারদের রোপিত ধান কেটে নিয়ে যান। এতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার দ্রুত পুনরায় আদালতের দ্বারস্থ হলে, জেলা জজ আদালতের মাননীয় বিচারক মুনসী আব্দুল মজিদ ২০২৫ সালের ১৬ জানুয়ারি অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা পুনরায় বহাল রাখেন এবং মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতে বদলি করেন।
জমির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, জমির প্রকৃত মালিকানা প্রমাণে রাহেলা আক্তার গংদের দলিল, খতিয়ান, নামজারি ও দীর্ঘস্থায়ী দখলের যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। অন্যদিকে মুসলেহ উদ্দিন গংয়ের পক্ষে যেসব ডিক্রি ও দলিল দেখানো হয়, তা পরস্পরবিরোধী, বিভ্রান্তিকর এবং সন্দেহজনকভাবে প্রাপ্ত।
স্থানীয়ভাবে জানা যায়, মুসলেহ উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরেই জমি দখল চক্রের সঙ্গে যুক্ত। তিনি নানা সময়ে বিভিন্ন পন্থায় জমির প্রকৃত মালিকদের হয়রানি করে আসছেন। তার বিরুদ্ধে রয়েছে দখলদারি, প্রতারণা এবং আদালতের প্রক্রিয়াকে বিকৃত করে অন্যের সম্পত্তি দখলের অভিযোগ।
এ বিষয়ে রাহেলা আক্তার বলেন, “আমরা আইনের প্রতি আস্থা রেখেই চলছি। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যক্তি ও প্রভাবশালীরা আদালতকেও বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। মুসলেহ উদ্দিন আমাদের জমি জোরপূর্বক নিতে চায়। আমরা ন্যায়ের আশায় লড়াই করছি।”
এই ঘটনায় এলাকায় সাধারণ মানুষের মাঝে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। স্থানীয়দের মতে, এই ঘটনা দৃষ্টান্তমূলকভাবে আইনগত পদক্ষেপের আওতায় না আনলে, ভবিষ্যতে আরও বহু পরিবার এই ধরণের হয়রানির শিকার হতে পারে।
সচেতন মহল দাবী করেন, রাহেলা আক্তার গংদের উপর যে হয়রানি ও দখলের চেষ্টা চলছে, তা কেবল একটি পরিবারের সম্পত্তির লড়াই নয়; এটি দেশের আইনি কাঠামো, আদালতের সঠিক বিচারপ্রক্রিয়া এবং সাধারণ মানুষের প্রতি অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর এক বাস্তব উদাহরণ। এখনই প্রয়োজন প্রশাসনের কার্যকর হস্তক্ষেপ, যাতে এমন ‘মুসলেহ উদ্দিন’ নামের কৌশলী দখলদারদের রাশ টেনে ধরা যায় এবং সত্যিকারের ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়।